পার্ক সার্কাস বাজার সংস্কার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টানাপোড়েন চলছে। গত কয়েক বছর ধরে ওই বাজার সংস্কার করতে সেখানকার ব্যবসায়ীদের পার্ক সার্কাস ময়দান সংলগ্ন এলাকায় সরতে বলছিল কলকাতা পুরসভা। কিন্তু তাতে ব্যবসায়ীরা রাজি না হওয়ায় বাজার সংস্কার ঘিরে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ওই বাজারের ব্যবসায়ী সমিতি এক বছর আগে বাজারের সামনে রীতিমতো সভা করে জানিয়ে দিয়েছিল, কোনওভাবেই সরবেন না তাঁরা। এবার কলকাতা পুরসভা এখানকার বাজারের ব্যবসায়ীদের জন্য পার্ক সার্কাস ময়দান এলাকায় ৮৫ হাজার স্কোয়ার ফিট জায়গা চিহ্নিত করেছে। আর এখন সেখানেই তাঁদের উঠে যেতে হবে।
এদিকে ৭৭ বছরের পুরনো পরিকাঠামোর ওই বাজার নতুন করে সংস্কারের মাধ্যমে গড়ে তুলতে চায় কলকাতা পুরসভা। তাই কলকাতা পুরসভার বাজার বিভাগ চিহ্নিত করা জায়গায় স্টল তৈরি করে ব্যবসায়ীদের স্থানান্তরিত করতে চাইছে। এই কাজ করতে ৬ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই বরাদ্দ করা হয়েছে। ‘বিপজ্জনক’ এই পার্ক সার্কাস বাজারকে পুরোপুরি ভেঙে ফেলে এবার সংস্কারের কাজে হাত দিতে চলেছে কলকাতা পুরসভা বলে সূত্রের খবর। আধুনিক মানের নতুন দোতলা বাজার নির্মাণ সেখানে করা হবে। তাতে উপকার হবে ব্যবসায়ীদের। এই বাজার এখন বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। ২০২২ সালে জুলাই মাস নাগাদ একজন দোকানি জখম হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: ‘এই ভাতাটা কোন অধিকারে দিচ্ছেন?’ শিক্ষাকর্মীদের অর্থ সাহায্যে মমতাকে প্রশ্নবাণ দিলীপের
অন্যদিকে ২০২৪ সালে মেয়র পারিষদদের বৈঠকে পাশ হয়ে গিয়েছিল পার্ক সার্কাস বাজারকে সংস্কার করে নতুন রূপে গড়ে তোলার প্রস্তাবটি। তারপর সেখানে কলকাতা পুরসভার টিম বারবার গিয়ে সরেজমিনে সব খতিয়ে দেখেন। রিলায়েন্স রিটেল প্রস্তাব দিয়েছিল যৌথভাবে বাজারের উন্নয়ন করার জন্য। কিন্তু সাড়ে ৫০০ বাজারের ব্যবসায়ী বেঁকে বসায় তা হয়নি। এখনও ব্যবসায়ীদের একটা অংশ অস্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হতে চাইছেন না। একটা বড় অংশ অবশ্য রাজি হয়েছে বলে কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর। আর যাঁরা সরতে চাইছেন না তাঁদের যুক্তি, ওখানে গেলে তাঁদের ব্যবসায় লোকসান হবে। যা মেনে নেওয়া কঠিন।
এছাড়া ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে কলকাতা পুরসভা বাজারের ব্যবসায়ীদের একটা প্রস্তাবও দিয়েছিল। এই বাজার নবনির্মাণ করতে যাঁরা স্থানান্তরিত হতে রাজি হবেন তাঁদের ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে দোকানের ভাড়ায়। কিন্তু তারপরও বিষয়টি বাস্তবে রূপ পায়নি। পার্ক সার্কাস মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক গিরীন্দ্রচন্দ্র পালের অভিযোগ ছিল, ‘অনলাইনে কেনাকেটার জেরে বাজারের দোকানিরা ধুঁকছেন। এই অবস্থায় বাজারটি পার্ক সার্কাস ময়দানের মতো শুনশান এলাকায় নিয়ে গেলে বিক্রি কিছুই হবে না।’ এবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘আমরা এখানকার ব্যবসায়ীদের বলেছি যত দ্রুত সম্ভব এই বাজার নতুন করে গড়ে তুলব। এখন ব্যবসায়ীরা যদি প্রস্তাব মেনে নিয়ে স্থানান্তরিত হন তাহলে ২০২৮ সালের মধ্যে নতুন করে বাজারটি গড়ে তোলা যাবে।’