যাঁরা কেবলমাত্র বিএড প্রশিক্ষণ নিয়েই প্রাথমিকে শিক্ষকতা করছেন, তাঁদের জন্য শীঘ্রই একটি বিশেষ 'ব্রিজ কোর্স' চালু করা হবে। যে কোর্সের মেয়াদ হবে ছ'মাস। এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাধ্যতামূলকভাবে এই কোর্সে অংশগ্রহণ করে শংসাপত্র অর্জন করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারেই এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে 'ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন' (এনসিটিই) কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু, এই কোর্স করানোর প্রয়োজনীয়তা কী? এটা জানতে গেলে আমাদের একটু পিছিয়ে যেতে হবে। নিয়ম অনুসারে - প্রাথমিক শিক্ষক পদে চাকরি পেতে গেলে ডিএড বা ডিএলএড কোর্স করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু, সারা দেশের এমন কয়েক লক্ষ প্রাথমিক শিক্ষক ও শিক্ষিকা রয়েছেন, যাঁরা বিএড কোর্স করলেও ডিএড বা ডিএলএড কোর্স করেননি। তাহলে তাঁরা প্রাথমিকে চাকরি পেলেন কীভাবে?
এক্ষেত্রে আরও একটি নিয়ম হল - উচ্চপ্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকস্তরে শিক্ষকতার জন্যই মূলত বিএড প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু, ২০১৮ সালের ২৮ জুন এনসিটিই কর্তৃপক্ষ একটি গেজেট নোটিফিকেশন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, যাঁদের ডিএলএড বা ডিএড করা নেই, কিন্তু বিএড করা আছে, তাঁরাও প্রাথমিক শিক্ষক হিসাবে চাকরি করতে পারবেন।
হিসাব বলছে, এই গেজেট নোটিফিকেশনের জেরে বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ৩ থেকে ৪ লক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন, যাঁরা বিএড করে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি করছেন। কিন্তু, তাঁরা চাকরি পাওয়ার পর একাধিক রাজ্য তাঁদের নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার ন্যায্য মাপদণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতে মামলা রুজু করে।
পরবর্তীকালে সেই সমস্ত মামলা পর্যবেক্ষণ করে সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে জানায়, প্রাথমিক শিক্ষক হতে গেলে শুধুমাত্র বিএড প্রশিক্ষণ থাকলেই চলবে না। তার সঙ্গে ডিএড ও অথবা ডিএলএড প্রশিক্ষণও বাধ্যতামূলকভাবে থাকতেই হবে। এই সুপ্রিম নির্দেশের ফলে সঙ্কটে পড়তে পারতেন প্রায় ৩ থেকে ৪ লক্ষ প্রাথমিক শিক্ষক ও শিক্ষিকা, যাঁদে নিয়োগ হয়েছিল ২০১৮ সালের জুন মাস থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যে।
এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি বাঁচাতে এবং প্রাথমিকে যাতে হঠাৎ করে শিক্ষকের আকাল বেড়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতেই শুধুমাত্র বিএড করা, ইন-সার্ভিসে থাকা শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য একটি বিশেষ 'ব্রিজ কোর্স' করানোর নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। সেই রায় ঘোষিত হয় ২০২৪ সালের ৮ এপ্রিল। অর্থাৎ - সুপ্রিম নির্দেশের প্রায় একবছর পর সেই নির্দেশ কার্যকর করার কথা জানাল এনসিটিই কর্তৃপক্ষ।
এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে, রিমোট পদ্ধতিতে অনলাইনে এই ব্রিজ কোর্স করানো হবে। এবং কোর্স চালু হওয়ার একবছরের মধ্যে যাতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক শিক্ষিকারা সকলেই তাতে যোগ দেওয়ার সুযোগ পান, তা তাঁদের স্কুলকেই নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ - এক্ষেত্রে দায়বদ্ধতা থাকবে শুধুমাত্র স্কুল কর্তৃপক্ষের উপর। যদিও এখনও পর্যন্ত কোর্সের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়নি।