মহেন্দ্র সিং ধোনির ব্যাটে একেবারেই মরচে ধরে গিয়েছে। ঝড় তুলে বোলারদের চোখে শর্ষেফুল দেখিয়ে ম্যাচ ফিনিশ করার সেই দক্ষতা আর নেই মাহির। একা দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে চার-ছয় মেরে ম্যাচ জেতাতে আর পারছেন না তিনি। সত্যি ‘বুড়ো’ হয়ে গিয়েছেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক। শনিবার (৫ এপ্রিল) দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে ধোনির ঠুকঠুক করে ইনিংস খেলার জেরেই চেন্নাই সুপার কিংসের হার আরও বেশি নিশ্চিত হয়ে যায়। আর এর পরেই ধোনিকে অবসর নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন সিএসকে-র ভক্তরাই। তাঁকে খেলানোটা যে ভুল সিদ্ধান্ত সেই দাবিও তুলেছেন অনেক ভক্ত। তাঁরা বলছেন, এর থেকে ধোনি ম্যাচ মিস করলে ভালো হত।
১৫ বছর পর চিপকে জিতল দিল্লি, হারের হ্যাটট্রিক সিএসকে-র
আইপিএলের শুরু থেকেই চেন্নাই সুপার কিংসের কাছে চিদম্বরম স্টেডিয়াম ছিল তাদের গড়। এই মাঠে সিএসকে-র সাফল্যের নজির ছিল একেবারে আকাশছোঁয়া। আইপিএলের বাকি দলগুলোর তুলনায় ঘরের মাঠে চেন্নাই সুপার কিংসের সাফল্যের হার সবচেয়ে বেশি। অথচ আইপিএলের ২০২৫ মরশুমে এই মাঠেই দু'টি ম্যাচ হেরে বসল সিএসকে। প্রথমটি হেরেছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে। আর শনিবার হারল দিল্লি ক্যাপিটালসের কাছে। অক্ষর প্যাটেলের নেতৃত্বে দিল্লি ক্যাপিটালস চিপকে ১৫ বছর পর জয়ের স্বাদ পেল। সেই সঙ্গে এবারের আইপিএলে জয়ের হ্যাটট্রিক করল তারা। এদিকে সিএসকে আবার হারের হ্যাটট্রিক করল।
আরও পড়ুন: জাড্ডু-মাহি জুটিতে হল বাজিমাত, বিদ্যুৎ গতিতে অশুতোষকে রানআউট করলেন ধোনি, ভিডিয়ো হল ভাইরাল
ধোনিকে নিয়ে ক্ষোভ সিএসকে ভক্তদের
দিল্লি ক্যাপিটালসের দেওয়া ১৮৪ রান তাড়া করতে নেমে চেন্নাই সুপার কিংসের ব্যাটাররা শুরু থেকেই নড়বড় করছিলেন। পাওয়ার প্লে-তে ৪১ রানের মধ্যে ৩ উইকেট পড়ে যায় সিএসকে-র। দুই ওপেনারই ব্যর্থ। রাচিন রবীন্দ্র ৩ (৬ বলে), ডেভন কনওয়ে ১৩ (১৪ বলে) করে সাজঘরে ফেরেন। কনওয়ের আগেই আউট হয়ে গিয়েছিলেন চেন্নাইয়ের অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড়। ৪ বলে ৫ করেই তিনি ফিরেছিলেন সাজঘরে। এই পরিস্থিতিতে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় চেন্নাইয়ের দল।
তবে চারে নেমে বিজয় শঙ্কর দলের হাল ধরেছিলেন। কিন্তু তাঁকে সঙ্গত করার কেউ ছিলেন না। পাঁচে নেমে শিবম দুবে ১৫ বলে ১৮ করেন। ছয়ে নেমে ব্যর্থ হন রবীন্দ্র জাদেজাও। ৩ বলে ২ করে আউট হন তিনি। এর পর সাতে নামেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। ধোনি যখন ক্রিজে এসেছিলেন, তখন দলের জেতার জন্য প্রয়োজন ছিল ৫৬ বলে ১১০ রান। কঠিন লক্ষ্য হলেও, টি২০-তে অসম্ভব কিছু ছিল না। আগের ধোনি হলে আনায়াসে এই ম্যাচ বের করে নিতে পারতেন। কিন্তু ‘বুড়ো’ ধোনি শুরু থেকে ঠুকে গেলেন। বল নষ্ট করলেন। শেষমেশ একটি করে চার এবং ছয়ের হাত ধরে ২৬ বলে ৩০ করে অপরাজিত থাকেন তিনি। যদিও তাতে কোনও লাভই হয়নি। বিজয় শঙ্কর ৫৪ বলে ৬৯ রান করেন। মারেন একটি ছয় এবং পাঁচটি চার। নির্দিষ্ট ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ করে সিএসকে। ২৫ রানে তারা ম্যাচটি হেরে যায়। দিল্লির হয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন বিপ্রজ নিগম।
আরও পড়ুন: বাপ বাপই হয়… রোহিতের মাস্টার প্ল্যানেই শেষমেশ পুরানের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট পান হার্দিক
এদিকে ধোনির দুরাবস্থা দেখে তাঁকে অবসর নিয়ে নিতে বলছে সিএসকে-র ভক্তরা। কারণ তাঁরা বুঝে গিয়েছে, ধোনি এখন দলের বোঝা। ধোনিকে আর একাদশে দেখতে চাইছেন না চেন্নাইয়ের ক্রিকেট সমর্থকেরা।
দিল্লির ইনিংস
টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন দিল্লি অধিনায়ক অক্ষর প্যাটেল। চেন্নাইয়ের মাঠে দুপুরে খেলা থাকলে তা অস্বাভাবিক নয়। আগের ২০টি ম্যাচের ১৮টিতেই আগে ব্যাট করেছে টসে জয়ী দল। তবে দিল্লি শুরুটা ভালো করেনি। প্রথম ওভারেই খালিল আহমেদের বলে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট বন জ্যাক ফ্রেজার ম্যাকগার্ক (০)। দলের শূন্য রানেই প্রথম উইকেট হারায় দিল্লি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ফ্যাফ ডু'প্লেসি না খেলায়, ম্যাকগার্কের সঙ্গে ওপেন করেছিলেন কেএল রাহুল। তিনি কিন্তু শুরু থেকেই দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন।
দ্বিতীয় উইকেটে বাংলার অভিষেক পোড়েলের সঙ্গে জুটি বেধে স্কোরবোর্ডে রান যোগ করতে শুরু করেন রাহুল। অভিষেক কিছুটা আগ্রাসী মেজাজেই ব্যাট করছিলেন। মুকেশ চৌধুরিকে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে পিটিয়ে ১৯ রান নেন। তবে পাওয়ার প্লে-তে খুব বেশি রান হয়নি দিল্লির। অশ্বিন এবং খালিল মিলে রানের গতি কমিয়ে দিয়েছিলেন। ৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৫১ করে দিল্লি ক্যাপিটালস।
সপ্তম ওভারে রবীন্দ্র জাদেজা বল করতে এসে ফেরান অভিষেককে। ১টি ছক্কা এবং চারটি চারের সৌজন্যে ২০ বলে ৩৩ রান করেন আউট হন অভিষেক। চারে নেমে অক্ষর প্রথম বলেই জাডেজাকে ছয় মারলেও, রাহুলের সঙ্গে লম্বা জুটি গড়তে পারেননি। ১৪ বলে ২১ করে তিনি সাজঘরে ফেরেন। উল্টোদিকে উইকেট পড়লেও, একটা দিকের হাল ধরে রেখেছিলেন রাহুল। সমীর রিজভি ১৫ বলে ২০ করেন। ছয়ে নেমে ত্রিস্তান স্টাবস ১২ বলে অপরাজিত ২৪ করেন। শেষ ওভারে আউট হয়ে যান রাহুলও। ৫১ বলে ৭৭ করেন কেএল। তাঁর এই ইনিংসে ছিল ৩টি ছক্কা, ৬টি চার। তবে রাহুলের ইনিংসের সৌজন্যেই নির্দিষ্ট ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৮৩ রান করে দিল্লি ক্যাপিটালস। সিএসকে-র হয়ে খালিল আহমেদ নেন ২ উইকেট।