দিঘার জগন্নাথধাম থেকে সম্প্রীতির নিশান উড়িয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী দেখিয়েছেন নজিরবিহীন সৌজন্য। এবার মানবিক মুখ্যমন্ত্রীকে দেখলেন সকলেই। দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে এখন রুদ্ধ দরজার ভিতরে চলে প্রাণপ্রতিষ্ঠা। তার সঙ্গে রাধাকৃষ্ণের মূর্তিতেও প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রাণপ্রতিষ্ঠার মাহেন্দ্রক্ষণ বুধবার সকাল ১১টা ১০ মিনিট থেকে ১১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ছিল। নিমকাঠের তৈরি জগন্নাথ মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা সম্পন্ন করা হয়েছে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অন্যতম প্রধান সেবায়েত রাজেশ দ্বৈতাপতির নেতৃত্বে পুরোহিতরা প্রাণপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। প্রত্যেক ধ্বজা উত্তোলকের জন্য মাথাপিছু ১০ লক্ষ টাকার বিমা করিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের আগের দিন সন্ধ্যায় দিঘায় মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে সমাজের নানা ক্ষেত্রের অতিথিদের ভিড় দেখা যায়। চা–চক্র শুরু হয়। সেখানে মিলিত হন মুখ্যমন্ত্রী। ওই বর্ণময় সভায় মিলিত হয়ে সকলেই আপ্লুত। আর আজ, বুধবার পুরীর মন্দিরে যাঁরা বংশ পরম্পরায় ধ্বজা উত্তোলনের কাজ করেন তাঁদেরই তিনজন দিঘায় প্রত্যেকদিন বিকেলে ধ্বজা পরিবর্তন করবেন। তার জন্য পারিশ্রমিকও পাবেন তাঁরা। আজ এই কাজগুলি করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কথা ঘোষণা করার পরই খুশির হাওয়া বইতে শুরু করে সৈকতনগরী দিঘায়।
আরও পড়ুন: ‘বিভেদ উড়িয়ে বাংলা থেকে ফের সম্প্রীতির নিশান....’, দিঘার জগন্নাথধাম থেকে দেব বার্তা
দিঘায় শুধু জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন করে সম্প্রীতির বার্তাই দেননি মুখ্যমন্ত্রী বরং তার সঙ্গে নজিরবিহীন সৌজন্যও দেখিয়েছেন। তাঁর বিরোধী সমস্ত দলের সিনিয়র নেতাদের এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি থেকে শুরু করে বিরোধী দলনেতাকেও আমন্ত্রণ জানান তিনি। যাঁরা রোজ তাঁকে নানা কুকথা বলে থাকেন। আমন্ত্রিত এই বিশিষ্ট অতিথিদের চা–চক্রে বাংলা ও মুম্বইয়ের শিল্পীরা ছিলেন। কবি–সাহিত্যিক, বণিকসভা ও ময়দানের ক্রীড়াকর্তারাও হাজির হন। পুরীর মন্দির থেকে ৫৭ জন জগন্নাথদেবের সেবক এবং ইসকন থেকে ১৭ জন সাধুও সামিল হন। মঙ্গলবার বিশ্বশান্তির জন্য হয় মহাযজ্ঞ এই দিঘার মন্দিরে।
আরও পড়ুন: বড়বাজারের হোটেলের অগ্নিকাণ্ডে বিস্তারিত রিপোর্ট চাই, দিঘা থেকে ফোনে নির্দেশ মমতার
এই মহাযজ্ঞে পূ্র্ণাহুতি দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের হাতে আরতিও করেন। মন্দিরের মাথায় ওড়ে ধ্বজা। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মা–মাটি–মানুষের জন্য পুজো দিয়েছি। মা–মাটি–মানুষ ভাল থাকলেই আমি ভাল থাকব।’ আজ মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই জগন্নাথদেবের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়। গতকাল বিকেলে পুরীর মন্দিরের নামে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ধ্বজা তুলে দেন রাজেশ দ্বৈতাপতি। মুখ্যমন্ত্রী সেই ধ্বজা পুরী থেকে আসা অভিজ্ঞ ধ্বজা উত্তোলক বিভূতি দাসের হাতে তুলে দেন। তিনি মন্দিরের চূড়ার শীর্ষে ধাতব ‘শ্রী চক্রে’ তা স্থাপন করেন। আর হাত জোড় করে মন্দির চূড়ায় তাকিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মাথাপিছু ধ্বজা উত্তোলকদের ১০ লক্ষ টাকার বিমা ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরী থেকে আসা বিভূতি দাস ছাড়াও অজয় নায়েক–সহ তিনজন ধ্বজা উত্তোলকের দিঘার মন্দিরে এই কাজ করবেন।