কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে নরকীয় হত্যালীলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। আর তারপর থেকেই বিজেপি এবং বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তরজা শুরু হয়েছে। বিজেপি নেতা, কর্মী থেকে শুরু করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি - সকলেই এই ঘটনার পর আরও বেশি করে দেশে মেরুকরণ ও বিভেদের রাজনীতি শুরু করেছেন বলে অভিযোগ বিরোধী দলগুলির। পালটা তারা এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের গাফিলতিগুলি তুলে ধরার চেষ্টা করছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
আর, এই রাজনৈতিক দড়ি টানাটানির মধ্যে বাংলা তথা ভারত হারিয়েছে তার আরও এক বীর সন্তানকে। তিনি হাবিলদার ঝণ্টু আলি শেখ। একদিকে যখন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ, এমনকী দেশবাসীরও একাংশ পহেলগাঁওয়ের হামলার পর থেকে সাম্প্রদায়িক বিভাজন নিয়ে নানা কথা বলছেন, ঠিক সেই সময়েই দেশের মাটি রক্ষা করতে গিয়ে শহিদ হয়েছেন নদিয়ার তেহট্টের ছেলে ঝন্টু। তিনি ছিলেন ভারতীয় সেনার বিশেষবাহিনীর সদস্য।
ঝন্টুর নিথর দেহ কফিনবন্দি হয়ে যখন গ্রামের বাড়িতে পৌঁছয়, তখন চোখের জলে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা ও বিদায় জানান আপনজন, আত্মীয়, বন্ধু, প্রতিবেশীরা। পূর্ণ মর্যাদায় তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে ভারতীয় সেনা। আমজনতা স্লোগান তোলে, 'হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ'!
এমন এক প্রেক্ষাপটেই বিজেপি নেতাদের বাক্যবাণে জর্জরিত করতে শুরু করেছে অবিজেপি রাজনৈতিক দলগুলির নেতাকর্মীরা। কারণ, ঝন্টুর বাড়িতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা পৌঁছে গেলেও গেরুয়া শিবিরের কাউকে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। যদিও বিজেপির দাবি, এসবই 'অপপ্রচার'!
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের প্রশ্ন, বিজেপি নেতাদের কেন দেখা গেল না ঝন্টু আলি শেখকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে? একই সুর শোনা গিয়েছে সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তীর গলাতেও। তিনি বলেন, এটা একজোট হয়ে লড়াই করার সময়। সেটা শহিদ ঝন্টু আলি শেখের দাদা (যিনি নিজেও একজন সেনাকর্মী) বোঝেন। কিন্তু, যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে, তাদের সেই সারমর্ম বোঝার যোগ্যতা নেই।
এমনকী, এই বিষয়টি নিয়ে সোশাল মিডিয়াতেও চর্চা শুরু হয়েছে। নেট নাগরিকদের একাংশ বিজেপির অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।
যদিও সংবাদমাধ্যমে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য পালটা দাবি করেছেন, এসবই হল আসলে 'অপপ্রচার। দলের স্থানীয় নেতৃত্ব তেহট্টে গিয়েছিলেন। খুব দ্রুত শীর্ষ নেতারাও যাবেন। শহিদের ধর্ম হয় না। যাঁরা বিএসএফ-কে ধর্ষক বলেন, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন, তাঁদের থেকে বিজেপিকে দেশপ্রেম শিখতে হবে না।'
প্রসঙ্গত, ঝন্টু আলি শেখের মরদেহ তাঁর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর পর সেখানে গিয়ে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র-সহ তাঁর স্বদলীয় নেতা ও কর্মীরা। সিপিআই(এম)-এর প্রতিনিধিরাও সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। কংগ্রেস নেতারা শহিদকে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির ছিলেন কলকাতা বিমানবন্দরে।