টিম ম্যানেজমেন্টের (কোচ নয়) চূড়ান্ত গাফিলতির জন্য এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে যেতে হয়েছে আফগানিস্তানকে। খেলোয়াড়দের কাছে স্পষ্ট ধারণাই ছিল না যে অঙ্কের মারপ্যাঁচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৩৭.১ ওভারের পরে জিতলেও এশিয়া কাপের 'সুপার ফোর'-এ উঠে যেতে পারবেন। তাঁরা সেই বিষয়ে না জানায় ৩৭.১ ওভারকেই পাখির চোখ করেই খেলেন। আর শেষে টিম ম্যানেজমেন্টের সেই গাফিলতির কারণে বড় মূল্য চোকাতে হয় রশিদ খান, মহম্মদ নবিদের। যাঁরা নিজেদের রক্তবিন্দু পর্যন্ত উজাড় করে দেন। তার জেরে সোশ্যাল মিডিয়ায় রোষের মুখে পড়েছে আফগানিস্তানের টিম ম্য়ানেজমেন্টের একাংশ। ছড়িয়ে পড়েছে মিম।
ঘটনাটি ঠিক কী হয়েছিল? মঙ্গলবার এশিয়া কাপের ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে লাহোরে মুখোমুখি হয় শ্রীলঙ্কা বনাম আফগানিস্তান। যে কোনও একটি দল ‘সুপার ফোর’-র টিকিট পাবে, সেই অবস্থায় খেলতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে আট উইকেটে ২৯১ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। সেই পরিস্থিতিতে ‘সুপার ফোর’-এ ওঠার জন্য আফগানিস্তানকে ৩৭.১ ওভারের মধ্যে সেই রান তুলতে হত। যদি ৩৭.১ ওভারের মধ্যে ওই রান তুলে নিতে পারতেন আফগানরা, তাহলে শ্রীলঙ্কার থেকে নেট রানরেটে এগিয়ে যেতেন। উঠে যেতেন ‘সুপার ফোর’-এ।
সেইমতো খেলতে থাকেন আফগানরা। বিশেষত নিজের ক্রিকেট কেরিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস খেলেন নবি। ৩২ বলে ৬৫ রান করে আফগানদের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখেন। তিনি আউট হয়ে গেলেও আফগানিস্তানের লোয়ার অর্ডার মেরে খেলতে থাকে। তার জেরে ৩৬ ওভারে রশিদদের স্কোর দাঁড়ায় আট উইকেটে ২৭৭ রান। অর্থাৎ সাত বলে ১৫ রান দরকার ছিল। স্ট্রাইকে ছিলেন রশিদ। প্রথম দুটি বলে কোনও রান না হলেও তৃতীয় বলে চার মারেন। 'সুপার ফোর'-এ টিকিট পেতে তিন বলে ১১ রান বাকি থাকা অবস্থায় পরপর দুটি চার মারেন রশিদ।
আরও পড়ুন: হিসাবে ভুল করে ফেলে আফগানিস্তান, রশিদরা জানতেন না কত ওভারে কত রান তুলে জিতলে সুপার ফোরে যাওয়া যাবে
আফগানিস্তানের তারকা স্পিনারের সেই দুই শটের কারণে ৩৭ ওভারের শেষে আফগানদের স্কোর দাঁড়ায় আট উইকেটে ২৮৯ রান। অর্থাৎ এক বলে তিন রান করলেই 'সুপার ফোর'-এ উঠে যেত। তবে অঙ্কের মারপ্যাঁচে ৩৭.১ ওভারের পরেও আফগানিস্তানের সামনে জয়ের সুযোগ ছিল। ৩৮ তম ওভারের প্রথম বলে মুজিবুর রহমান কোনও রান না পেলেও জয়ের জন্য হাতে আরও বল পেত আফগানিস্তান। তারইমধ্যে প্রথম বলে আউট হয়ে যান মুজিব।
তিনি আউট হয়ে গেলেও আফগানিস্তান যদি পরবর্তী তিন বলের মধ্যে ২৯৫ রান তুলে ফেলত, তাহলে তারা ‘সুপার ফোর’-এ উঠে যেত। শুধু তাই নয়, নেট রানরেটের অঙ্ক অনুযায়ী, ৩৮.১ ওভারে গিয়েও আফগানরা ম্যাচ জিতলে এশিয়া কাপে টিকে থাকতেন। সেক্ষেত্রে তাঁদের প্রথমে শ্রীলঙ্কার স্কোরে (২৯১) পৌঁছাতে হত। তারপর একটি ছক্কা মেরে ২৯৭ রান তুলতে পারলেই ‘সুপার ফোর’-এ উঠে যেতেন। আবার ৩৭.৫ ওভারে আফগানিস্তানের স্কোর যদি ২৯৫ হত, তাহলে শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তানের নেট রানরেট সমান হত। সেক্ষেত্রে টসের মাধ্যমে নির্ধারিত হত যে কারা ‘সুপার ফোর’-র চতুর্থ দল হবে।
কিন্তু সেই অঙ্কের মারপ্যাঁচের বিষয়ে রশিদদের কোনও ধারণাই ছিল না। কারণ টিম ম্যানেজমেন্টের তরফে কোনও বার্তা পাননি তাঁরা। শেষপর্যন্ত ৩৭.৪ ওভারে ২৮৯ রানে অল-আউট হয়ে যান। দু'রানে জিতে এশিয়া কাপের ‘সুপার ফোর’-এ চলে যায় শ্রীলঙ্কা। আর তারপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল রোষের মুখে পড়ে আফগানিস্তানের টিম ম্যানেজমেন্ট। একজন WWE-তে মারের একটি ভিডিয়ো শেয়ার করে লেখেন, ‘আজ রাতে আফগানিস্তানের অ্যানালিটিকাল টিমের সঙ্গে এটাই করবেন রশিদ খান এবং মহম্মদ নবি।’
অপর একজন আবার একটি ব্যাঙ্কের কাউন্টারের মতো জায়গা ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘কাজ করছেন আফগানিস্তানের টিম অ্যানালিস্ট।’ যে ছবিতে দেখা গিয়েছে যে কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন পড়েছে। আর যিনি কাউন্টারে আছেন, তিনি কম্পিউটারে তাস খেলছেন। অনেকেই অবিলম্বে আফগানিস্তানের টিম অ্যানলিটিস্টকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করার দাবি তুলেছেন। অকর্মণ্য বলেও কটাক্ষ করেছেন অনেকে।
আরও পড়ুন: কী কারণে পাকিস্তানে হয়নি সম্পূর্ণ এশিয়া কাপ? ব্যাখ্যা দিলেন ACC প্রধান জয় শাহ
এমনকী ম্যাচের শেষে আফগানিস্তানের হেড কোচ জোনাথন ট্রট জানিয়েছেন, নেট রানরেটের মারপ্যাঁচের বিষয়টা তাঁরা জানতেন না। তাঁর কথায়, ‘আমাদের এই অঙ্কের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। আমাদের স্রেফ বলা হয়েছিল যে ৩৭.১ ওভারের মধ্যে জিততে হবে। আমরা ২৯৫ রান বা ২৯৭ রান তুলেও যে জিততে পারি, সেটা আমাদের বলা হয়নি। ৩৮.১ ওভারের বিষয়টি আমাদের একবারও জানানো হয়নি।’