আর মাত্র কয়েকটা ঘণ্টার অপেক্ষা। তারপরই শীতের ছুটি জমাতে বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে হাজির হয়ে যাবে ফেলুদা, খাদান, সন্তান, চালচিত্র, ৫ নম্বর স্বপ্নময় লেন। আর সেখানে ৩টে প্রজেক্টে কমন ফ্যাক্টর হলেন অনির্বাণ চক্রবর্তী। শেষবারের মতো সৃজিতের নির্দেশনায় পর্দায় জটায়ু হয়ে ধরা দেওয়ার আগে তাঁর আসন্ন কাজ থেকে শুরু করে টলিউড প্রসঙ্গে বললেন নানা কথা। শুনল হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা।
আরও পড়ুন: 'আর বসন্ত এসে গেছে গাইতে ভালো লাগে না' লগ্নজিতার! অকপটে স্বীকার করতেই কী বুদ্ধি দিয়েছিলেন সুরজিৎ?
এইবারের শীত তাহলে অনির্বাণ-ময় নাকি?
অনির্বাণ: অনির্বাণ চক্রবর্তী-ময় এটা একেবারেই বাড়িয়ে উক্তি। ঘটনাটা কাকতালীয় ভাবে ঘটে গেছে, যে একই দিনে আমার তিনটি কাজ আসছে। ২ টো সিনেমা এবং একটি ওয়েব সিরিজ। প্রথমে যখন জেনেছিলাম যে এমন হতে চলেছে তখন মজা লেগেছিল, কারণ এমন সচরাচর তো ঘটে না। কিন্তু এই তো কালকেই ২০ তারিখ। কালকেই এটা অতীত হয়ে যাবে। সেই জন্য এটা নিয়ে এখন আর ভাবছি না। এখন ভাবছি ছবিগুলো ঠিকঠাক হল পাক। কাল ছবিগুলো মুক্তি পাবে, এখনও ঠিকঠাক হল লিস্ট বেরোয়নি। ছবিগুলো দর্শকরা দেখুক, ভালো লাগুক এটাই চাই।
হলের প্রসঙ্গ উঠলই যখন, তখন জিজ্ঞেস করি। এই যে হিন্দি ছবি রমরমিয়ে ব্যবসা করলেই বাংলা ছবির শো কমিয়ে দেওয়া হয়, বা ঠিক মতো হল পায় না এটা নিয়ে কী মত?
অনির্বাণ: বিভিন্ন পেশায় যাঁরা রয়েছি তাঁদের আলাদা-আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি থাকবেই এই বিষয়ে। হল মালিকদের যে বক্তব্য সেটা খুব সিম্পল, 'যে ছবি আমাকে ভালো ব্যবসা দিচ্ছে সেটাকে কেন সরাব?' এবার, আমি সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে পারব না। বাংলায় বাংলা ছবি রিলিজ হবে, কিন্তু হল পাওয়া যাবে না সেটাও তো অদ্ভুত! আমাদের এখানে এমন কোনও নিয়ম নেই যে একটা হলে যে কটা শো চলে তার এতটা পার্সেন্ট বাংলা ছবিকেই দিতে হবে, বাকি ভাষার ছবিকে এত পার্সেন্ট দিতে পারো। নিয়ম নেই বলে তাঁরা বাধ্য নন। তাঁরা তাঁদের ইচ্ছে মতো শো দেন। কোনও সিঙ্গল স্ক্রিনে যদি যে ৪টি বাংলা ছবি আসছে সেগুলোর একটাকেও না শো দেয় তাহলে খারাপ লাগতে পারে, সমালোচনা করতে পারি, কিন্তু শো দিতে বাধ্য করতে পারি না। নিয়ম হলে একটা বলার জায়গা থাকে। আপাতত দর্শকদের অনুরোধ করব তাঁরা যেন ছবিগুলো দেখেন।
একেন বাবু বলেই আপনি বাঙালির কাছে জনপ্রিয়। আবার প্রধান ছবিতে প্রধানের মতো চরিত্রেও নজর কেড়েছেন, এবার পালা মান্ডি এবং নাসিরের। ইচ্ছে করেই বিভিন্ন ধরনের চরিত্র বাছেন?
অনির্বাণ: কেমন কী প্রতিক্রিয়া পাব ভেবে কাজ বাছি না। কিন্তু আমার কাছে যে কাজের অফার আসে সেগুলোর মধ্যে থেকে কাজ বাছার ক্ষেত্রে যেটা দেখি সেটা হল, চরিত্রগুলোয় যেন বৈচিত্র্য থাকে। একই ধরনের চরিত্র না হয়। যে চরিত্র নতুন, আগে কখনও করিনি সেটাকে আমি প্রাধান্য দিই। পুলিশের চরিত্র অনেক করেছি, কিন্তু সব কটা চরিত্র একে অন্যের থেকে আলাদা। খাদানে যে আদিবাসীর চরিত্র করেছি তার ভাষা আলাদা, শরীরী ভাষা আলাদা। এই ধরনের চরিত্র আমি আগে কখনও করিনি। আবার চালচিত্রতে পুলিশের চরিত্র আমার আগে করা পুলিশের চরিত্রগুলোর থেকে অনেকটাই আলাদা। আমি চেষ্টা করি অভিনেতা হিসেবে আমি যেন বোর না হই, একঘেয়ে না লাগে কাজটা। কাজ বাছার ক্ষেত্রে সেটা আমার একটা চাওয়া থাকে।
মান্ডি আর নাসিরকে নিয়ে যদি একটু বলেন।
অনির্বাণ: মান্ডি একজন আদিবাসী নেতা, কিন্তু সে ছবিতে কী করছে সেটা আমি এখনই বলব না। সে ইতিবাচক না নেতিবাচক, না কী করছে সেটা সাসপেন্স থাক। এমনকি ট্রেলারেও দেখে থাকবেন ছবির গল্প সম্পর্কে বলা নেই তেমন, আমার চরিত্র নিয়েও বলা নেই, তাই আমি এর বেশি বলব না। কিন্তু এর আগে আমি এমন চরিত্র করিনি। আর নাসির পুলিশ তো বটেই, কিন্তু ভীষণ ভদ্র, সর্টেড একজন মানুষ। সে মাথা ঠাণ্ডা রেখে সব করে। এই ছবিতে যে পুলিশের টিম দেখবেন সেখানে ৪ জন ৪ ধরনের। আলাদা আলাদা ভাবে কাজ করেন, সেই হিসেবেই তাঁরা টিম। শান্ত মাথায় সব করার কাজটা নাসির করে। একই সঙ্গে সে মিতভাষী। এই গল্পে নাসিরের মেয়ের কথাও তুলে ধরা হয়েছে, যার অটিজম আছে। ফলে বাবা মেয়ের বন্ডিং, তাঁদের জীবনের ক্রাইসিসের কথাও দেখা যাবে। আমার চরিত্রটা একজন সিঙ্গল প্যারেন্টের, মান্ডির মতো এমন চরিত্রও আগে করিনি।
মান্ডির জন্য কতটা আর কেমন প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
অনির্বাণ: মান্ডির জন্য আমায় ভাষা রপ্ত করতে হয়েছে। এই চরিত্রটি তো আদিবাসীর, তাই আমরা যে ভাষায় কথা বলি, সে তো সেই ভাষায় বলবে না। তার ভাষার ধরন আলাদা। তাছাড়া, একদম নতুন লুক নিতে হয়েছে, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বদলাতে হয়েছে। তীর ধনুক চালাতে শিখতে হয়েছে এই চরিত্রের জন্য। তাই এটা করে আমার বেশ মজা লেগেছে। এগুলো আমার জানা ছিল না।
একসঙ্গে এতগুলো কাজ। ২ মাসে মোট ৫টা কাজ আসছে, ২০২৪ তবে খুব ব্যস্ততায় কেটেছে?
অনির্বাণ: হ্যাঁ, খুবই ব্যস্ততায় কেটেছে। তবে, আমি খুব উপভোগ করেছি। যেটুকু ক্লান্তি এসেছে সেটা শারীরিক। মানসিকভাবে আমি খুব শান্তিতে ছিলাম, আছি, কারণ আমি নানা ধরনের কাজ করেছি, করতে পেরেছি।
সৃজিত দা (সৃজিত মুখোপাধ্যায়) জানিয়ে দিয়েছেন তিনি আর ফেলুদা নিয়ে কাজ করবেন না। আপনি কি বলবেন এটা নিয়ে?
অনির্বাণ: আমি যেহেতু অভিনেতা এক্ষত্রে আমার বিশেষ কিছু বলার জায়গা নেই। একজন পরিচালক একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে কাজ করছিলেন, সে যদি কোনও কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেন সেটা মেনে নিতে হবে। আর উনি তো কারণটাও জানিয়েছেন, আর সেই কারণগুলো অস্বীকার করার এতটুকু জায়গা নেই। শ্যুটিংয়ের সময়ও এটা নিয়ে কয়েকবার আভাস দিয়েছিলেন, যদিও কথা হয়নি। পরে উনি বিষয়টা নিয়ে নিশ্চয় আবার ভেবেই এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। আমার চরিত্রটা ভালো লাগছিল, মিস করব। যদি আবার কাজ হতো, করতাম, এটুকুই। কিন্তু এটা নিয়ে কাউকে অনুরোধ করার মানে নেই, বিশেষ করে যেখানে সৃজিত কারণ বলে দিয়েছেন। আমি তাঁর সিদ্ধান্তকে সম্মান করি।
টলিউডের পাশাপাশি, বলিউড প্রজেক্টেও কি আপনাকে দেখা যাবে শীঘ্রই?
অনির্বাণ: অফার আসে। কিন্তু এর মধ্যে হিন্দি প্রজেক্টে কাজ করিনি, শেষ করেছি প্রতিমের (প্রতিম ডি গুপ্ত, পরিচালক) টুথপরী। এমন কোনও অফার পাইনি যেটা দেখে মনে হয়েছে এটা আমার করা দরকার। ইন্টারেস্টিং লাগেনি। খালি হিন্দি ছবি বলেই তো লাফিয়ে পড়ার মানে নেই। আমার তো সেটা পছন্দ হতে হবে। আমি যে কারণে একটা বাংলা ছবিকে সিলেক্ট করব, হিন্দি ছবির ক্ষেত্রেও সেগুলো থাকতে হবে। খালি পারিশ্রমিক তো একটা ফ্যাক্টর নয়। সারা ভারতের লোক দেখবে ঠিকই, কিন্তু এমন চরিত্র তার জন্য করতে হবে যেটা দর্শক মনে রাখবে। সেরকম অফার এলে নিশ্চয় করব। অপেক্ষা করছি।
আজকাল অন্যতম চর্চার বিষয়, ফি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে কমছে বাংলা ছবির সংখ্যা, আপনার কী মত এটা নিয়ে?
অনির্বাণ: এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক যে ছবির সংখ্যা কমছে। ছবির যেমন একটা অ্যাস্থেটিক দিক আছে, নানা ধরনের ছবি বানানো উচিত, তেমনই ব্যবসার দিকটাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রযোজকরা যে ছবিগুলো বানাচ্ছেন সেগুলো যদি উপযুক্ত ব্যবসা না দিতে পারে তাহলে তার মনেও প্রশ্ন জাগছে যে আমি যে বিনিয়োগ করছি সেটা ফেরত পাচ্ছি তো আদৌ? আমরা হয়তো এমন বাংলা ছবি বানাতে পারছি না যেটা দর্শকদের হলে টানবে। আবার কিছু ছবি ভালো চলছে, সেগুলো দর্শকদের পছন্দ হচ্ছে তার মানে। তাই কোন ছবি হিট হবে সেটা আগে থেকে বুঝতে পারা খুবই কঠিন। এক ধরনের ছবি হিট হল মানে অনেক সময় পরপর সেই ধরনের ছবি বানানো হয়, কিন্তু দেখা যায় পরেরগুলো হিট হয় না। তাই কখন কোন ছবি মানুষের ভালো লাগবে সেটা প্রেডিক্ট করা মুশকিল। কিন্তু এই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আর সেটা হচ্ছে তো। কিন্তু সংখ্যা কমছে। যদিও আমার কাছে পরিসংখ্যান নেই, বিভিন্ন মাধ্যমে এই নিয়ে লেখা হলে পড়ি।
সামনেই বড়দিন আর ইংরেজি নববর্ষ। কী প্ল্যান একেন বাবুর?
অনির্বাণ: (হেসে) আমার কিচ্ছু প্ল্যান থাকে না। কখনই থাকে না। অনেক মানুষ, ভিড় দেখলে আমি কুঁকড়ে যাই। আমি একটু প্রাইভেট মানুষ। আর তাছাড়া বড়দিন, ৩১ তারিখ দুদিনই আমার কাজ আছে। ২৫ তারিখ শ্যুটিং আছে, ৩১ তারিখ জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের ছবি অপরিচিতর প্রমোশন আছে। আমার ওই ছবিটা ১০ জানুয়ারি মুক্তি পাবে। ১ তারিখে আবার ইভেন্ট আছে। এসব করেই কেটে যাবে। সেগুলো করে বাড়ি এসে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ব। তবে...
বলুন?
অনির্বাণ: ফাঁকা সময় থাকলে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটাতে ইচ্ছে করে। আমার বন্ধুর সংখ্যা যদিও কম। ওরা বলে দেখা করার কথা, কিন্তু আবার জোরও করে না। জানে যে কেন পারছি না যেতে। আমি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার মাধ্যমে তাই সবাইকে বড়দিন এবং ইংরেজি নববর্ষের অগ্রিম শুভেচ্ছা জানালাম।