২০০৮ সালে রানা তাহাউর দুবাইয়ে গিয়ে মুম্বই হামলার এক পরিকল্পনাকারীর সঙ্গে দেখা করেছিল। ডেভিড কোলম্যান হেডলিই সেই সাক্ষাৎ সম্ভব করেছিল। এই পরিস্থিতিতে সেই রহস্যজন 'দুবাই ম্যান' কে ছিল, তা খুঁজে বের করতে তাহাউর রানাকে জোরদার জেরা করতে পারে এনআইএ। প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাত ২টো নাগাদ রানাকে ১৮ দিনের এনআইএ হেফাজতে পাঠানো হয়েছিল। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই তাঁকে দিল্লির লোধি রোডে এনআইএ-র সদর দফতরে নিয়ে আসা হয় তাকে। সকাল পর্যন্ত বিশ্রামের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তাহাউরকে এবং তারপরে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয় তার। এই প্রথম ভারতীয় তদন্তকারীরা সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদ করছে রানাকে। এর আগে ২০১০ সালের জুন মাসে আমেরিকায় হেডলিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল এনআইএ-র একটি দল। (আরও পড়ুন: তাহাউর রানার পর্দা ফাঁস করতে NIA-র তুরুপের তাস 'রহস্যময় সাক্ষী', মুখোমুখি বসিয়ে হতে পারে জেরা)
আরও পড়ুন: ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য সভাপতি বদল বিজেপির, পদে বসলেন...
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক রানা লস্কর-ই-তৈয়বার সক্রিয় সদস্য। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ডেভিড কোলম্যান হেডলি ওরফে দাউদ গিলানির জন্য পাসপোর্ট জোগাড় করেছিল সে। ২০০৮ সালের নভেম্বরে লস্কর ও পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের সহায়তায় ভারতে হামলাকারীদের চিহ্নিত করেছিল হেডলি। তদন্তকারী সংস্থাগুলির মতে, শুধু হামলার পরিকল্পনাই নয়, ২০০৮ সালের ১১ নভেম্বর দুবাই হয়ে মুম্বই এসেছিল রানা। সে হোটেল রেনেসাঁয় (পাওয়াই) ছিল এবং আক্রমণ সম্পর্কিত ব্যবস্থা পর্যালোচনা করেছিল। এর ঠিক পাঁচ দিন পর ২৬ নভেম্বরে হামলার ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। (আরও পড়ুন: 'মুখ্যমন্ত্রী যেন কোনও বিভ্রান্তিতে না থাকেন… সব মুসলিম অসন্তুষ্ট', বিস্ফোরক MLA)
আরও পড়ুন: ওয়াকফের নামে ফের অশান্ত মুর্শিদাবাদ, হাসপাতালে আগুন,BSF গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ
মার্কিন বিচার বিভাগের নথি অনুযায়ী, লস্কর-ই-তৈয়বাকে আর্থিক সহায়তা এবং ডেনমার্কের একটি সংবাদপত্রে হামলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ২০০৯ সালে তাহাউর রানা ও ডেভিড হেডলিকে গ্রেফতার করে এফবিআই। ২০১৯ সালে ভারত সরকার রানার প্রত্যর্পণ চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি কূটনৈতিক নোট হস্তান্তর করে। ২০২০ সালের জুনে ভারত তাকে অস্থায়ীভাবে গ্রেফতারের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক আবেদন দায়ের করে, যা তার প্রত্যর্পণের পথ প্রশস্ত করে। গত ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ও ভারতে গিয়ে বিচারের মুখোমুখি হবে। রানার প্রত্যর্পণকে ভারতের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক ও আইনি বিজয় হিসাবে দেখা হচ্ছে। ২০১৯ সাল থেকে এর জন্য লাগাতার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল মোদী সরকার। (আরও পড়ুন: 'গানপয়েন্টে আলোচনা নয়', মার্কিন শুল্ক জুজু নিয়ে স্পষ্ট বার্তা ভারতের)
আরও পড়ুন: পাকিস্তানিদের অনুপ্রবেশ রুখে দিল সেনা, শহিদ ১, কাশ্মীরে খতম একাধিক জঙ্গি
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বই হামলায় ১৭৪ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং শতাধিক আহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা এই হামলা চালিয়েছিল। রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে তার সহযোগী ডেভিড কোলম্যান হেডলিকে মুম্বই হামলার পরিকল্পনায় সাহায্য করেছিলেন। রানার ইমিগ্রেশন কনসালটেন্সি ফার্মের কর্মী সেজে মুম্বইয়ের রেকি করেছিল হেডলি। হেডলির সাক্ষ্য অনুযায়ী, ২০০৬ সালের গ্রীষ্মে ভারতে তার গুপ্তচরবৃত্তির কার্যকলাপ লুকোতে সে এবং দুই লস্কর জঙ্গি মুম্বইয়ে একটি অভিবাসন অফিস খোলার পরিকল্পনা করেছিল। হেডলি এই তথ্য রানাকে দিয়েছিল। রানা তার শিকাগো-ভিত্তিক সংস্থা ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসের মাধ্যমে হেডলিকে ভারতে একটি অফিস খোলার অনুমতি দেয় যাতে হেডলি সহজেই মুম্বই ভ্রমণ করতে পারে। ২০০৭ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে হেডলি পাঁচবার ভারতে ভ্রমণ করেছিল এবং তাদের সবকটিতেই সে ২৬/১১ হামলার জন্য রেকি করেছিল। সেই সময় তাঁর কাছে যে পাঁচ বছরের ভিসা ছিল, তা জোগাড় করতে রানা তাকে সাহায্য করেছিল। মুম্বই পুলিশ তাদের দু'জনের মধ্যে ই-মেল কথোপকথনও খুঁজে পেয়েছে, যেখানে তারা আইএসআইয়ের মেজর ইকবালের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছিল।
এখনও পর্যন্ত ভারতে একমাত্র আজমল কাসাবই ২৬/১১ হামলার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। ২০১২ সালে ফাঁসি হওয়া একমাত্র জীবিত সন্ত্রাসী ছিল কাসাব। বাকিরা সব সন্ত্রাসী সেই হামলাতেই নিহত হয়েছিল। এদিকে ভারতে রানার বিরুদ্ধে ইউএপিএ ও ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। এনআইএ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।