মঙ্গলবার নৃশংস জঙ্গি হানায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে রয়েছেন তিনজন বাঙালি। রয়েছেন কলকাতার বৈষ্ণবঘাটার বাসিন্দা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বিতান অধিকারী। স্ত্রী এবং সাড়ে তিন বছরের সন্তানের সামনেই তাঁকে হত্যা করে জঙ্গিরা। বুধবার রাতেই ফিরেছে তাঁর কফিনবন্দি দেহ। কিন্তু, বাবার মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না সাড়ে তিন বছর বয়সি হৃদান। এখনও সে তার বাবাকে ক্রমাগত খুঁজে চলেছে। (আরও পড়ুন: '৩ দশক ধরে নোংরা কাজ করে আসছি', ব্রিটিশ মিডিয়াতে অকপট স্বীকারোক্তি পাক মন্ত্রীর)
আরও পড়ুন: পহেলগাঁওয়ে হামলা খবর কখন পায় থানা? কেন ধরা পড়েনি জঙ্গিরা? FIR-এ মিলল তথ্য
বিতান ছেলেকে ফ্লোরিডা নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। খুদের কথায়, ‘আমার বাবা এবার আমাদের ফ্লোরিডা নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি কোথায়?’ তবে শুধু হৃদানই নয়, তার মা সোহিনী অধিকারীও মেনে নিতে পারছেন না স্বামীর মৃত্যু। বর্তমানে তিনি কলকাতায় আছেন। কিন্তু, সেই ভয়াবহ মুহূর্তের কথা সবসময় তাঁকে পিছু ধাওয়া করে বেড়াচ্ছে। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য এবং স্বামীকে হারানোর কথা কোনওভাবেই ভুলতে পারছেন না তিনি। সোহিনীর কথায়, ‘আমি সেই দুঃস্বপ্নের মুহূর্তগুলি ভুলতে পারছি না। যে বন্দুকধারী আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেছিল তার কপালে একটি ভিডিয়ো ক্যামেরা বাঁধা ছিল। মানে তারা নৃশংস ঘটনাগুলি রেকর্ড করছিল অথবা লাইভ স্ট্রিমিং করছিল।’ (আরও পড়ুন: পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পরে পাকিস্তানকে 'বাঁচানোর চেষ্টা'! গ্রেফতার বিধায়ক)
সোহিনী বলেন, তাঁর স্বামীকে জঙ্গিরা জিজ্ঞাসা করেছিল যে তিনি হিন্দু না মুসলিম। গুলি করার আগে তাঁকে কলমা পড়তে বলা হয়েছিল।’ কাশ্মীরে ঘুরতে যাওয়ার আগে বাড়িতে বসে ভ্রমণের পরিকল্পনার কথা মনে করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এই সোফায় বসে ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছিলাম। এখন আমি এখানে একা বসে আছি।’ এখন প্রতি মুহূর্তে শূন্যতা তাড়া করে বেড়াচ্ছে সোহিনীকে। স্বামীর কথা মনে করতেই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তিনি। সোহিনী বলেন, ‘আমরা নিজেদের জন্য কিছু সময় কাটাতে কাশ্মীরে গিয়েছিলাম। আর সেই কাশ্মীর আমাদের কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। আমরা চাইলেও আর একসঙ্গে থাকতে পারব না।’
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিতানের পরিবার এবং বন্ধুরা রাত ১১.৩০ টার দিকে কেওড়াতলা শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন। সোহিনী তাঁর ছেলের সঙ্গে বাড়িতেই ছিলেন। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং মেয়র ফিরহাদ হাকিম তাঁর শেষকৃত্যে শ্মশানে উপস্থিত ছিলেন। সোহিনী জানান, ছেলের জন্য বিতান তাঁকে কতগুলি পাখি কিনতে বলেছিলেন। সেই পাখিগুলি দেখেও স্বামীর কথা মনে পড়ছে সোহিনীর। তাঁর কথায়, ‘পাখিগুলি রয়ে গিয়েছে, কিন্তু তুমি চলে গিয়েছো।’
ভয়ঙ্কর সেই ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে সোহিনী আরও বলেন, ‘জঙ্গিরা আমার স্বামীকে গুলি করার পর প্রথমে আমি ভেবেছিলাম তিনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন। হয়তো তাঁকে বাঁচানো যাবে। তাই আমি তাঁকে জল দিয়ে এবং যা করা যায় তা করে তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। কিন্তু, আর জ্ঞান ফেরেনি তাঁর। তখনই আমি বুঝতে পারলাম সব শেষ।’