সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদ-আন্দোলনের জেরে ফের একবার রণক্ষেত্রের চেহারা নিল মুর্শিদাবাদ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। এর আগে জঙ্গিপুর একই কারণে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। আর এবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল সামশেরগঞ্জ!এখনও পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের হাতে যেটুকু তথ্য এসে পৌঁছেছে, তাতে জানা গিয়েছে - সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে পথে নেমে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। পুলিশের উপর ব্যাপকভাবে হামলা করা হয় বলে অভিযোগ। যার জবাব দিতে হয় পুলিশকেও। এমনকী, প্রাণ বাঁচাতে মসজিদে আশ্রয় নেন একাধিক পুলিশকর্মী।অন্যদিকে, শুক্রবারের (১১ এপ্রিল, ২০২৫) এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত বোমাবাজি ও গুলি চালনার অভিযোগ সামনে এসেছে। দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলেও দাবি করা হচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে বাধ্য হয়েই বিএসএফ-কে রাস্তায় নামাতে হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে ট্রেন চলাচলের উপর নিয়ন্ত্রণ ঘোষণা করা হয়েছে। যার ফলে পরিষেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে।বিভিন্ন সূত্রের দাবি, জঙ্গিপুরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই মুর্শিদাবাদ জেলায় সতর্ক ছিল পুলিশ প্রশাসন। নয়া আইন অনুসারে ১৬৩ ধারা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু, শুক্রবার দুপুরে সামশেরগঞ্জের ডাকবাংলো মোড় থেকে সুতির সাজুর মোড় পর্যন্ত অংশে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন ওয়াকফ-প্রতিবাদীরা। এর ফলে স্বাভাবিক যান চলাচল ব্যাহত হয়।পুলিশ সেই অবরোধ তুলতে গেলেই তাদের লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি শুরু করা হয় বলে অভিযোগ। পালটা লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশও। এই সময়েই বোমাবাজি হয় বলে অভিযোগ। ফরাক্কার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক-সহ একাধিক পুলিশকর্মী জখম হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে কাঁদানে গ্য়াসের সেল ফাটাতে হয়। অভিযোগ, পুলিশ নাকি বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়ে। তাতেই প্রতিবাদী দুই যুবক আহত হন। তাঁদের জঙ্গিপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।এদিকে, হামলার মুখে প্রাণ বাঁচাতে স্থানীয় মসজিদে ঢুকে পড়েন বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী। সেখানেই আশ্রয় নেন তাঁরা! অন্যদিকে, বিক্ষোভের আগুনে দাউ দাউ করে পুড়তে থাকে বাস। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ কার্যত ছিন্ন হয়ে যায়। ফরাক্কা-আজিমগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচলও থমকে যায়। পরিস্থিতি ক্রমশ আরও বিরাট আকার নিতে থাকায় বাধ্য হয়েই বিএসএফ-এর সাহায্য নেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীদের সামাল দিতে রাস্তায় নামেন বিএসএফ জওয়ানরা। কড়া হাতে অবস্থা আয়ত্তে আনার চেষ্টা করেন তাঁরা।এই প্রেক্ষাপটে রেলের পক্ষ থেকে এদিন রাত ৮টায় একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়, রেলের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন কারণের জেরে ধুলিয়ানগঞ্জ ও নিমতিতার মধ্যে ট্রেন চলাচল ব্য়াহত হয়েছে।ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এদিন প্রায় ৫,০০০ মানুষের একটি জমায়েত রেললাইন অবরোধ করে। যার জেরে দুপুর ২টো বেজে ৪৬ মিনিট থেকে নিউ ফরাক্কা ও আজিমগঞ্জ রুটে পরিষেবা ব্যাহত হয়। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে রেলের সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। এই ঘটনার জেরে এদিন একাধিক ট্রেন বাতিল করতে হয় এবং বহু ট্রেন ঘুর পথেও চালানো হয়।বাতিল হওয়া ট্রেনের তালিকায় রয়েছে - ৫৩০২৯ আজিমগঞ্জ - ভাগলপুর প্য়াসেঞ্জার, ৫৩৪৩৫ কাটোয়া - আজিমগঞ্জ প্যাসেঞ্জার। যেসমস্ত ট্রেনের যাত্রাপথ ছেঁটে ফেলা হয়, সেই তালিকায় রয়েছে - ৫৩০২২ সাহেবগঞ্জ - আজিমগঞ্জ প্যাসেঞ্জার (ভারওয়ারয়া পর্যন্ত চালানো হয়), ৫৩৪৩৪ বারহারওয়া - আজিমগঞ্জ প্যাসেঞ্জার (বল্লালপুর পর্যন্ত চালানো হয়)।এছাড়াও ঘুর পথে চালানো হয় - ১৩৪৬৫ মালদা টাউন ইন্টারসিটি (আজিমগঞ্জ - নলহাটি - রামপুরহাট - গুমানি রুটে চালানো হয়), ০৫৬৪০ কলকাতা - শিলচর স্পেশাল (আজিমগঞ্জ - নলহাটি - রামপুরহাট - গুমানি রুটে চালানো হয়), ১৩১৪১ শিয়ালদা - নিউ আলিপুরদুয়ার তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস (আজিমগঞ্জ - নলহাটি - রামপুরহাট - গুমানি রুটে চালানো হয়), ১৫৬৪৪ কামাক্ষ্যা - পুরী এক্সপ্রেস (গুমানি - রামপুরহাট - আজিমগঞ্জ -কাটোয়া ব্যান্ডেল রুটে চালানো হয়), ১৩৪৩২ বালুরঘাট - নবদ্বীপ ধাম এক্সপ্রেস (গুমানি - রামপুরহাট - নলহাটি - আজিমগঞ্জ রুটে চালানো হয়)।