❀বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, হৃদরোগ বা কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে প্রতি বছর প্রায় ১.৮৯ কোটি মানুষ প্রাণ হারান। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, বেশি ওজন ও ধূমপানের মতো ঝুঁকি নিয়ে মানুষ সচেতন থাকলেও হিমোফিলিয়া নামক বিরল রক্তক্ষরণজনিত রোগ ও হৃদরোগের সম্পর্ক সম্পর্কে অনেকেই অবগত নয়।
জেনেটিক সমস্যা ধরা পড়ে যখন
🔴চিকিৎসক মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্যের (কনসালট্যান্ট, হেমাটো অনকোলজি, মণিপাল হাসপাতাল, ঢাকুরিয়া) কথায়, ‘হিমোফিলিয়া একটি জেনেটিক রোগ। সাধারণত শিশুরা যখন হাঁটতে শেখে তখন অস্বাভাবিক ফোলাভাব বা হঠাৎ রক্তপাতের মাধ্যমে এই রোগ ধরা পড়ে। হিমোফিলিয়ায় আক্রান্তদের রক্তে ক্লটিং ফ্যাক্টরের ঘাটতি থাকে। ক্লটিং ফ্যাক্টর রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ফ্যাক্টর VIII (হিমোফিলিয়া A) বা ফ্যাক্টর IX (হিমোফিলিয়া B)-এর ঘাটতি হয়। ফলে তাদের অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশি থেকে অপ্রত্যাশিত রক্তপাত হতে পারে।’
আরও পড়ুন - 🎐ঘন ঘন ফোন ঘাঁটার স্বভাব কমিয়ে দিচ্ছে এই হরমনের ক্ষরণ! বড় বিপদে শৈশব
বাড়ছে হার্টের রোগী
🍸চিকিৎসক সৌম্য কান্তি দত্ত (কনসালট্যান্ট, ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, মণিপাল হাসপাতাল, ঢাকুরিয়া) জানাচ্ছেন, ‘অনেকেই মনে করেন হিমোফিলিয়া রোগীরা হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকিতে পড়েন না। কারণ তাদের রক্ত সহজে জমাট বাঁধে না। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসার কারণে হিমোফিলিয়া রোগীরা এখন অনেকটাই সুস্থ জীবন যাপন করতে পারেন। ফলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগের মতো সাধারণ রোগগুলির সম্মুখীন হন। অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হৃদরোগের মূল কারণ। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হিমোফিলিয়া রোগীদেরও এই সমস্যা দেখা দেয়। ২০২১ সালে Haemophilia Journal-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে, হিমোফিলিয়া রোগীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের হার প্রায় ৫০ শতাংশ। যা সাধারণ মানুষের সমান বা কখনও কখনও তার বেশি।’
আরও পড়ুন - 🎀সন্তানের মামুলি জ্বরও হতে পারে ক্যানসারের লক্ষণ, নজর রাখুন এসব উপসর্গের দিকেও
কীভাবে হৃদরোগ ধরা পড়ে?
♕১. অ্যান্টিথ্রম্বোটিক থেরাপি: হৃদরোগের স্ট্যান্ডার্ড চিকিৎসায় অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট ও অ্যান্টিপ্লেটলেট ওষুধ ব্যবহার হয়। কিন্তু হিমোফিলিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা ঝুঁকিপূর্ণ। মাঝারি হিমোফিলিয়ায় লো-ডোজ অ্যাসপিরিন বিশেষ পর্যবেক্ষণে ব্যবহার করা যায়। স্টেন্ট বসানোর পর DAPT (ডুয়াল অ্যান্টিপ্লেটলেট থেরাপি) সর্বনিম্ন সময়ের জন্য প্রয়োগ করা উচিত। UFH (Unfractionated Heparin) একবারের বোলাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়, কারণ এর অর্ধ-জীবন (হাফ লাইফ) কম এবং সহজে প্রতিকারযোগ্য।
২. সার্জিকাল ইন্টারভেনশন ও PCI:
ꦏঅ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি বা বাইপাস সার্জারির ক্ষেত্রে হিমোফিলিয়া রোগীদের জন্য হেমাটোলজিস্ট ও কার্ডিওলজিস্টদের যৌথ পরিকল্পনা প্রয়োজন। প্রোসিডিউরের সময় ক্লটিং ফ্যাক্টর ৮০ শতাংশ মাত্রায়, DAPT চলাকালীন ৩০ শতাংশ এবং অ্যাসপিরিন ব্যবহারের সময় ৫ শতাংশ মাত্রায় প্রয়োগ করা উচিত। অধিকাংশ রোগী বর্তমানে নিয়মিত প্রফিল্যাক্সিস হিসেবে ফ্যাক্টর VIII ইনজেকশন নেন, যাতে রক্তে ১–৫% লেভেল বজায় থাকে।
৩. উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ:
꧂স্ট্যাটিন, এসিই ইনহিবিটার ও বিটা-ব্লকারস সাধারণত নিরাপদ। AF রোগীদের জন্য DOAC (Direct Oral Anticoagulants) লো-ডোজ হিসেবে দেওয়া হয়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি যদি অনিয়ন্ত্রিত থাকে তাহলে ব্রেইন হেমোরেজের ঝুঁকি বাড়ে। CHA2DS2-VASc ও HAS-BLED স্কোরের মাধ্যমে থ্রমবোসিস ও ব্লিডিং রিস্ক মূল্যায়ন করা উচিত।