২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম মূলচক্রী তাহাউর হুসেন রানাকে আজ ভারতে প্রত্যর্পণ করা হতে পারে। মার্কিন আদালতের সুপারিশ মেনে দিল্লি ও মুম্বইয়ের দুটি জেলে গোপনে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতে আনার পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ রানাকে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) হেফাজতে রাখা হবে। রিপোর্টে দাবি করা হচ্ছে, তাহাউর রানাকে বিশেষ বিমানে করে ভারতে নিয়ে আসা হতে পারে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোটা অভিযানে নজর রেখেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ আধিকারিকরা। (আরও পড়ুন: 🐼১০৪% শুল্কের বোঝায় নত বেজিং, মার্কিন শুল্ক জুজুর বিরুদ্ধে ভারতের 'হাত' চাইল চিন)
আরও পড়ুন: 𝔍ফেস ID, QR কোড ফিচার সহ নতুন আধার অ্যাপ আনল সরকার, দেখে নিন কীভাবে কাজ করবে এটি?
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক রানা লস্কর-ই-তৈয়বার সক্রিয় সদস্য। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ডেভিড কোলম্যান হেডলি ওরফে দাউদ গিলানির জন্য পাসপোর্ট জোগাড় করেছিল সে। ২০০৮ সালের নভেম্বরে লস্কর ও পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের সহায়তায় ভারতে হামলাকারীদের চিহ্নিত করেছিল হেডলি। তদন্তকারী সংস্থাগুলির মতে, শুধু হামলার পরিকল্পনাই নয়, ২০০৮ সালের ১১ নভেম্বর দুবাই হয়ে মুম্বই এসেছিল রানা। সে হোটেল রেনেসাঁয় (পাওয়াই) ছিল এবং আক্রমণ সম্পর্কিত ব্যবস্থা পর্যালোচনা করেছিল। এর ঠিক পাঁচ দিন পর ২৬ নভেম্বরে হামলার ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। (আরও পড়ুন: 🤡ভারতের কার্যকর হল ২৬% মার্কিন শুল্ক, দেশের GDP বৃদ্ধির পূর্বাভাস বদলাল RBI)
আরও পড়ুন: 🌌শুল্ক জুজুর মাঝে রেপো রেট নিয়ে বড় ঘোষণা করল RBI, কী প্রভাব পড়বে EMI-এর ওপর?
উল্লেখ্য, সম্প্রতি, ২৬/১১ মুম্বাই সন্ত্রাসবাদী হামলার অভিযুক্ত তাহাউর রানার প্রত্যর্পণ বিরোধী জরুরি আবেদন খারিজ করে দেয় মার্কিন আদালত। রানা তার আবেদনে দাবি করেছিল, মুসলিম এবং পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত হওয়ার কারণে ভারতে নির্যাতন করা হবে তাকে। তবে তার সেই দাবি ধোপে টেকেনি মার্কিন শীর্ষ আদালতে। এই রায়ের পর এখন রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের পথ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। (আরও পড়ুন: ✃কল্যাণের 'কুকথায়' নাকি কেঁদে ফেলেছিলেন মহুয়া, দাবি তৃণমূলেরই সাংসদের)
আরও পড়ুন: ﷽জারি ১৬৩ ধারা, জঙ্গিপুরে ওয়াকফ নিয়ে হিংসায় উদ্বিগ্ন রাজ্যপাল, পুলিশ নিয়ে বললেন…
প্রসঙ্গত, ভারত ও আমেরিকা দুই দেশের মধ্যে ১৯৯৭ সালে প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই আবহে ভারতের অনুরোধে আমেরিকার প্রশাসন রানাকে গ্রেফতার করেছিল। ২০১১ সালে শিকাগোর আদালতে সন্ত্রাসবাদী মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল রানা। তার বিরুদ্ধে লস্কর-ই-তইবা জঙ্গিদের সাহায্য করার অভিযোগ ছিল। প্রসঙ্গত, তাহাউর রানার বন্ধু পাকিস্তানি-আমেরিকান নাগরিক ডেভিড কোলম্যান হেডলি। এই আবহে ২০২৩ সালের মে মাসে একটি মার্কিন আদালত পাক বংশোদ্ভূত রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের পক্ষে রায় দিয়েছিল। তবে সেই রায়ের বিরুদ্ধে রানা আবেদন করেছিল। তারপর রানার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া থমকে গিয়েছিল। এরপর মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট রানার বিপক্ষে রায় দেয় সম্প্রতি। (আরও পড়ুন: 🌊কল্যাণ-মহুয়া বিতর্কে তুঙ্গে, তৃণমূলের কোন সাংসদকে এগিয়ে রাখলেন অভিজিৎ গাঙ্গুলি?)
আরও পড়ুন: 🤪ফের চর্চায় যাদবপুরের ইন্দ্রানুজ, এবার টিএমসিপির পতাকায় আগুন দিয়ে বললেন...
♏মার্কিন বিচার বিভাগের নথি অনুযায়ী, লস্কর-ই-তৈয়বাকে আর্থিক সহায়তা এবং ডেনমার্কের একটি সংবাদপত্রে হামলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ২০০৯ সালে তাহাউর রানা ও ডেভিড হেডলিকে গ্রেফতার করে এফবিআই। ২০১৯ সালে ভারত সরকার রানার প্রত্যর্পণ চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি কূটনৈতিক নোট হস্তান্তর করে। ২০২০ সালের জুনে ভারত তাকে অস্থায়ীভাবে গ্রেফতারের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক আবেদন দায়ের করে, যা তার প্রত্যর্পণের পথ প্রশস্ত করে। গত ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ও ভারতে গিয়ে বিচারের মুখোমুখি হবে। রানার প্রত্যর্পণকে ভারতের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক ও আইনি বিজয় হিসাবে দেখা হচ্ছে। ২০১৯ সাল থেকে এর জন্য লাগাতার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল মোদী সরকার।
ཧ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বই হামলায় ১৭৪ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং শতাধিক আহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা এই হামলা চালিয়েছিল। রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে তার সহযোগী ডেভিড কোলম্যান হেডলিকে মুম্বই হামলার পরিকল্পনায় সাহায্য করেছিলেন। রানার ইমিগ্রেশন কনসালটেন্সি ফার্মের কর্মী সেজে মুম্বইয়ের রেকি করেছিল হেডলি। হেডলির সাক্ষ্য অনুযায়ী, ২০০৬ সালের গ্রীষ্মে ভারতে তার গুপ্তচরবৃত্তির কার্যকলাপ লুকোতে সে এবং দুই লস্কর জঙ্গি মুম্বাইয়ে একটি অভিবাসন অফিস খোলার পরিকল্পনা করেছিল। হেডলি এই তথ্য রানাকে দিয়েছিল। রানা তার শিকাগো-ভিত্তিক সংস্থা ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসের মাধ্যমে হেডলিকে ভারতে একটি অফিস খোলার অনুমতি দেয় যাতে হেডলি সহজেই মুম্বই ভ্রমণ করতে পারে। ২০০৭ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে হেডলি পাঁচবার ভারতে ভ্রমণ করেছিল এবং তাদের সবকটিতেই সে ২৬/১১ হামলার জন্য রেকি করেছিল। সেই সময় তাঁর কাছে যে পাঁচ বছরের ভিসা ছিল, তা জোগাড় করতে রানা তাকে সাহায্য করেছিল। মুম্বই পুলিশ তাদের দু'জনের মধ্যে ই-মেল কথোপকথনও খুঁজে পেয়েছে, যেখানে তারা আইএসআইয়ের মেজর ইকবালের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছিল।
𝐆এখনও পর্যন্ত ভারতে একমাত্র আজমল কাসাবই ২৬/১১ হামলার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। ২০১২ সালে ফাঁসি হওয়া একমাত্র জীবিত সন্ত্রাসী ছিল কাসাব। বাকিরা সব সন্ত্রাসী সেই হামলাতেই নিহত হয়েছিল। এদিকে ভারতে রানার বিরুদ্ধে ইউএপিএ ও ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। এনআইএ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।